তরিকুল ইসলাম: রোহিঙ্গাদের শরনার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা সফররত জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়ং হি লি। একই সঙ্গে তিনি মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের সাথে যা ঘটেছে তা স্পষ্টত মানবাধিকার লঙ্ঘন জানিয়ে দ্রুত এ ধরণের কার্যক্রম বন্ধে দেশটির প্রতি আহবান জানিয়েছন।
গতকাল রোববার বিকেলে রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের প্রতি এ আহ্বান জানান জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত। রোহিঙ্গা সংকট পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশে ১০ দিনের সফর শেষে এ সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। এ সময় তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শীঘ্রই হচ্ছে না। কারণ মিয়ানমারের পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি। রাখাইন থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি কক্সবাজারে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। তবে রোহিঙ্গারা এখানে শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি। তাদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।
ইয়াং হি লি আরো বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যা হয়েছে, তা স্পষ্টত মানবাধিকার লঙ্ঘন। এটা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। কেননা বিশ্বের অন্য সাধারণ মানুষের মতো তাদেরও ভালোভাবে বেচে থাকার অধিকার রয়েছে। তিনি এমন এক সময় মিয়ানমার-বাংলাদেশ সফর করছেন যখন মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা চালানোর অভিযোগ এনে তদন্ত শুরু করার প্রাথমিক প্রক্রিয়া সমাপ্ত করেছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। এর আগে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের একটি তদন্ত মিশনকে দেশটিতে প্রবেশের সুযোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলো মিয়ানমার। সে সময় ইয়ংহি লি’র কাজেও বাধা প্রধান করেছিলো দেশটির সরকার। যদিও জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াং হি লি ১০দিনের সফরে এখন ঢাকা রয়েছেন। গত ২৯ জুন ঢাকায় আসেন তিনি। রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা প্রদানে নিযুক্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি ও কূটনীতিকদের সঙ্গে তাদের মতবিনিময় ছাড়াও সরকারের নীতি নীর্ধারকদের সাথে বৈঠক করছেন ইয়াং হি লি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জানুয়ারিতে সম্পন্ন হওয়া বাংলাদেশ-মিয়ানমার চুক্তির আওতায় এখনও একজন রোহিঙ্গাকেও ফিরিয়ে নেয়নি মিয়ানমার। তবে সেই চুক্তির পর বেশ খানিকটা সময় পেরিয়ে গেলেও ধোঁয়াশা কাটছিলনা।
ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, এখন রোহিঙ্গাদের গণহত্যার বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদের আন্তর্জাতিক চাপ জোরালো হওয়ায় দেশটি জাতিসংঘের সাথে প্রত্যাবাসন চুক্তিতে বাধ্য হয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদ সদস্যদের রাখাইন সফর ছিলো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার জন্য শুভকর। সে সময় নিরাপত্তা পরিষদ জানায়, দেশটির সরকার এমন অভিযোগ তদন্তের ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে মানবাধিকার দফতরের মতো জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাকে নিযুক্ত করতে হবে। আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর সহযোগিতায় এসব নৃশংসতার অভিযোগ নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে। সম্পাদনা: সিদ্ধার্থ দে