আশিক রহমান : শিক্ষাবিদ ড. অজয় রায় বলেছেন, ভাষা নিয়ে আগের মতো সেই গর্ব, সেই অহংকার আমাদের নেই এমনটি যারা বলছেন তাদের সঙ্গে আমি একমত নই। ভাষা নিয়ে এখনো আমাদের গর্ব আছে, অহংকারও আছে। বড় প্রমাণ তো বাংলা একাডেমির আয়োজিত ‘অমর একুশে বইমেলা’। যেখানে নানা ধরনে বই প্রকাশিত হচ্ছে। সেখানে বাংলায় বিজ্ঞানের বই আছে, শিল্প-সাহিত্য-দর্শনের বই আছে। হতাশ হওয়ার মতো অবস্থায় বাংলা ভাষার চর্চা নেই। সারাবছর তো বটেই, ফেব্রুয়ারি এলে ভাষা নিয়ে আমাদের অহংকার আরও বেড়ে যায়। ভাষার মর্যাদা, ভাষার ব্যবহার ও অহংকার ধরে রাখার জন্য বুদ্ধিজীবীদের এগিয়ে আসতে হবে। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি আরও বলেন, উচ্চশিক্ষায় বাংলার ব্যবহার একেবারে হচ্ছে তা নয়। উচ্চশিক্ষায়ও বাংলার ব্যবহার হচ্ছে। তবে যতোটা আমরা আশা করছি, ততোটা হচ্ছে না। এখন শিক্ষকরা বাংলায় লেকচার দিতে বাধ্য হন। কারণ যেসব শিক্ষার্থী এসএসসি পাস করে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে তাদের প্রায় সবারই বাংলা মাধ্যমে পড়ালেখা করা। এরা ইংরেজিতে এতো পটু নয়। শিক্ষকরা যদি ইংরেজি বক্তৃতা দেন তাহলে শিক্ষার্থীরা বুঝতে না পারলে হইচই করে দেয়। শিক্ষার্থীরা তখন বাংলায় বলার অনুরোধ করে শিক্ষককে।
এক প্রশ্নের জবাবে ড. অজয় রায় বলেন, এখন প্রশ্ন হচ্ছে, উচ্চশিক্ষায় আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ বই আছে কিনা। যেমন ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি কিংবা ইকোনোমিক্স-এর বই বাংলায় আছে কি না। একেবারে আমরা অথৈ জলে আছি বলা যাবে না। এখন আমাদের যারা বেসরকারি প্রকাশক রয়েছেন তাদের উচিত হবে, উচ্চশিক্ষার লেভেলে বই প্রকাশ করা। বাংলা একাডেমি একা কতোদিক সামলাবে? তাদের তো অন্য কাজও রয়েছে। তবে কাজ চালানোর মতো ফিজিক্স, কেমিস্ট্রির কিছু বই রয়েছে।
তিনি বলেন, সার্বিকভাবে দেশের সব জায়গায় বাংলা ভাষার চর্চা আমরা যতোটা চাই ততোটা হয়তো হয় না। দেশের সব এলাকায় এখনো বাংলা ভাষা সঠিকভাবে চর্চা হয় না। বিচারিক কাজগুলো এখনো মোটামুটিভাবে ইংরেজিতেই হয়। আমাদের অধিকাংশ বিচারপ্রার্থী বাংলা বোঝেন, ইংরেজি তাদের ততোটা রপ্ত নয়। রায় প্রকাশ ইংরেজিতে হলে সাধারণ মানুষের বুঝতে অসুবিধা হয়। যেসব আইনজীবী মক্কেলের হয়ে আর্গুমেন্ট করেন তারা যেন বাংলায় সেটা করেন, তার মক্কেল যেন বুঝতে পারেন তার উকিল কি বলছেন তার পক্ষে। দেশের সব জায়গাতেই যেন আমরা বাংলায় বলতে, লিখতে, পড়তে পারি তার ব্যবস্থাও করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলা ভাষার সার্বজনীন ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্ব সবসময়ই বেশি। এ বিষয়ে প্রথমে সরকারকে একটা নির্দেশ দিতে হবে যে, এখনো যেসব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে পাঠদান করা হচ্ছে, সেখানে যেন অবিলম্বে বাংলা ভাষায় পড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। কলেজে শিক্ষককেরা যেসব বক্তৃতা দেন তা যেন বাংলা ভাষায় নোট তৈরি করে ছাত্রদের কাছে বিলি করেন।
ড. অজয় রায় বলেন, পাঠ্যপুস্তক সাম্প্রদায়িকীকরণ শুরু হয়েছে খুব সম্প্রতি। এটা নিশ্চয়ই আমরা কিছুদিনের মধ্যে তা দূর করে ফেলবো। উপযুক্ত পাঠ্যপুস্তকই রচিত হবে। শিক্ষায় ওই ধরনের কোনো নৈরাজ্য আছে বলে মনে হয় না। ক্লাস তো নিয়মিতই হচ্ছে। এমনও নয় যে, হরতাল হচ্ছে, ক্লাস হচ্ছে না। হয়তো মাঝেমধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখি। এখন তো তাও নেই। কিন্তু একেবারে নৈরাজ্য বলতে যা বোঝায় আমার মনে হয় না আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় এ রকম কিছু আছে।