ওমর ফারুক : কক্সবাজার, টেকনাফ, পাবনা, যশোরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ চারজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১০ পুলিশ সদস্য। নিহতদের মধ্যে কক্সবাজারে নিহত ব্যক্তিরা মানব পাচার কারি, টেকনাফে নিহত ব্যক্তি ইয়াবা ব্যবসায়ী, পাবনায় ও যশোরে নিহত ব্যক্তি ডাকাত বলে জানিয়েছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে এ ঘটনাগুলো ঘটে। পুলিশের ভাষ্য, নিহতদের নামে বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে। এ ঘটনায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে দেশী-বিদেশি বিভিন্ন অস্ত্র। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্য নিয়ে এ প্রতিবেদন :
আমাদের কক্সবাজার প্রতিনিধি আমান উল্ল্যাহ জানান, সোমবার দিবাগত মধ্য রাতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলীর ইয়াবা গডফাদার সৈয়দুল মোস্তফা ভুলু (৩৫) নিহত হয়েছেন। নিহত ভুলু কক্সবাজার পৌরসভার পাহাড়তলির মাদক সম্রাট হাজী জহির আহাম্মদের ছেলে। ভুলুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৭টির অধিক মামলা রয়েছে। তার বাবা জহির আহাম্মদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় দুই ডজনের মতো মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কক্সবাজার সদর মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. খায়রুজ্জামান বলেন, ভুলু কক্সবাজার শহরের মোস্ট ওয়ান্টেড ইয়াবা ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৭টির অধিক মামলা রয়েছে। সোমবার রাতে তাকে পাহাড়তলী এলাকা হতে আটক করেন এসআই আনসারুল হক। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে নিয়ে ইয়াবা ও অস্ত্র উদ্ধারে রাতে তার এলাকায় যায় পুলিশ।
পাহাড়তলী এলাকায় তার আস্তানায় গেলে তার সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। পরে ঘটনাস্থলে ভুলুকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। তাকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
আমাদের টেকনাফ প্রতিনিধি হুমায়ূন রশিদ জানান : উখিয়া-টেকনাফে মানবিক আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা অবৈধভাবে মানব পাচারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। টেকনাফ সাগর উপকূলে পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে দুই রোহিঙ্গা মানব পাচারকারী নিহত হয়েছে। এসময় ৪জন পুলিশ আহত হলেও ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র ও বুলেট উদ্ধার করা হয়েছে।
জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার ভোরে কক্সবাজার টেকনাফের উপকূলীয় শাপলাপুর মেরিন ড্রাইভ পয়েন্ট দিয়ে মানব পাচারের খবর পেয়ে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে মানব পাচারকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ পাল্টা গুলি চালায়।
এতে পুলিশের এএসআই জাহিরুল হকসহ ৪জন আহত হয়। পরে ঘটনাস্থল থেকে ২টি দেশীয় অস্ত্র ও ৫ রাউন্ড বুলেটসহ গুলিবিদ্ধ দুই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে। উদ্ধারকৃতদের হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে।
নিহতরা উখিয়া উপজেলার জামতলী এ ব্লকের মৃত রহিম আলীর ছেলে আব্দুস সালাম (৫২) এবং বাহারছড়া শাপলাপুরের এ ব্লকের আব্দুর রহিমের ছেলে আজিম উল্লাহ (২২) বলে সনাক্ত করে লাশ পোস্ট মর্টেমের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। টেকনাফ মডেল থানা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে এই ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান।
আমাদের পাবনা প্রতিনিধি কালাম আজাদ জানান : পাবনার ঈশ্বরদী থানার ঝাউতলা মোড়ে গতকাল মঙ্গলবার ভোরে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে হাফিজুর রহমান তিতাস (৩৮) নামের এক ডাকাত নিহত হয়েছে। এসময় ঈশ্বরদী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার জহুরুল হক, ওসি বাহাউদ্দিন ফারুকীসহ ৬ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। নিহত হাফিজুর ঈশ্বরদী থানার বাঁশেরবাদা গ্রামের আজিজ মোল্লার ছেলে। ঘটনাস্থল থেকে ১টি রিভলবার, ২টি কার্তুজ ও ৪ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) বাহাউদ্দিন ফারুকী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, রাতে ঈশ্বরদী চাঁনমাড়ি মোড়ে সন্দেহজনক ঘুরাফিরা করায় পুলিশ তিতাসকে আটক করে। পরে সে জানায় তারা ঝাউতলা মোড়ে ডাকাতির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ সেখানে অভিযান চালালে সংবদ্ধ ডাকাতদল পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। আত্মরক্ষার্তে পুলিশও গুলি চালায়, পরে ঘটনাস্থলে হাফিজুর রহমান তিতাস গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। তার বিরুদ্ধে ঈশ্বরদীসহ বিভিন্ন থানায় ১৭টি মামলা রয়েছে।
ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
আমাদের যশোর প্রতিনিধি তরিকুল ইসলাম জানান : যশোরে “দু’দল ডাকাতের বন্দুকযুদ্ধে” অজ্ঞাত (৪২) এক ব্যক্তি মারা গেছেন। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে যশোর-মাগুরা মহসড়কের নোঙ্গড়পুর মাজারের পাশে এই বন্দুক যুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
নিহতের গায়ে লাল, নীল ও ছাইরঙা স্ট্রাইপের টি-শার্ট এবং পরনে ছাইরঙা ফুলপ্যান্ট ছিল।
যশোর কোতোয়ালি থানার এসআই মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, ভোররাতে পুলিশ খবর পায়- যশোর-মাগুরা সড়কের নোঙরপুর এলাকায় মাজারের পাশে দু’দল ডাকাতের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ চলছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে গুলিবিদ্ধ একব্যক্তিকে দেখতে পায়। তাকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের ডা. শফিউল্লাহ সবুজ তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শ্যুটার গান, তিন রাউন্ড গুলি, তিনটি হাসুয়া উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়া গেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।