রাশিদ রিয়াজ : ভারতে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, বুধবার নির্বাচন কমিশন যে ভাবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে লোকসভা ভোটপ্রচার এক দিন কমিয়ে দিল এবং সরিয়ে দিল দুই আমলাকে, সেটা কি বাড়াবাড়ি নয়? এধরনের নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে কমিশনের বৈধতা কিংবা সাংবিধানিক অনুমোদন নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। কিন্তু আদৌ সে কাজের প্রয়োজন ছিল কিনা, তা নিয়ে আইনজ্ঞদের মধ্যে দ্বিমত পুরোদমেই। টাইমস অব ইন্ডিয়া
ভারতীয় সংবিধানের ৩২৪ অনুচ্ছেদ নির্বাচন কমিশনকে ভোট পরিচালনা, তদারকি ও ভোটপ্রক্রিয়া সামগ্রিক নিয়ন্ত্রণের অধিকার দিয়েছে। এই ধারার বলে অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু ভোটের স্বার্থে যে কোনও ধরনের প্রশাসনিক পদক্ষেপ করতে পারে কমিশন। মঙ্গলবার কলেজ স্ট্রিট ও বিধান সরণিতে কংগ্রেস সভাপতি অমিত শাহের র্যালি চলাকালীন যে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয় বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে, সে জন্যই ৩২৪ অনুচ্ছেদে উল্লেখিত বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে সপ্তম দফা ভোটের প্রচার এক দিন কমিয়ে দিয়েছে কমিশন। এর পরেই বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন ওঠে, কেন্দ্রের শাসকদলের অঙ্গুলিহেলনেই কি এটা করেছে কমিশন? এতে কি প্রার্থীর প্রচারের অধিকার খর্ব করা হল না?
আইনজ্ঞ মহলে অবশ্য এই নিয়ে নানা মত রয়েছে। মুম্বাই হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি তথা সংবিধান বিশেষজ্ঞ চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘অযথা বাংলার জন্য একটা লজ্জার দৃষ্টান্ত স্থাপন করল কমিশন। এতটা প্রয়োজন ছিল না। প্রচার বন্ধ না-করলেও চলত।’ ঔচিত্যের প্রশ্নটিকে তিনি ‘তর্কের বিষয়’ আখ্যা দিয়েও বলেন, ‘আইনি সিলমোহর থাকলেও এই বাড়াবাড়ি পদক্ষেপটা কমিশন না-করলেও পারত।’
যদিও সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় মনে করেন, বিন্দুমাত্র ভুল নেই কমিশনের পদক্ষেপে। তিনি বলেন, ‘কোনও অসাংবিধানিক কিংবা বেআইনি কাজ করেনি কমিশন। বরং বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে। যা করা হয়েছে তার ষোলো আনা অনুমোদন রয়েছে সংবিধানের ৩২৪ অনুচ্ছেদে।’ তার বক্তব্য, জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে ২৫ দিন প্রচারের যে অধিকার প্রার্থীকে দেওয়া হয়েছে, তাকে অতিক্রম করার ক্ষমতা অনুচ্ছেদ ৩২৪-ই দিয়েছে কমিশনকে।
প্রবীণ আইনজীবী গীতানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের গলায় আবার পক্ষপাতেরই অনুযোগ। তার কথায়, ‘ঝামেলা হল বিজেপি-তৃণমূলের মধ্যে। তার জন্য সময়সীমার এক দিন আগে প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হল সবারই। কংগ্রেস, সিপিএম-সহ অন্য দলগুলো কী দোষ করল? দু’টো দলের মধ্যে ঝামেলার খেসারত বাকি দলগুলো কেন দেবে? ’ ওই নজিরকে সামনে রেখে এটা বলা যায় না যে কলকাতা ও দুই ২৪ পরগনার আইন-শৃঙ্খলার এতটাই অবনতি হয়েছে যে প্রচার বন্ধ করে দিতে হবে আগেভাগে। ‘কমিশনের এই সিদ্ধান্ত মারাত্মক বাড়াবাড়ি। আদৌ এত বাড়াবাড়ির দরকার ছিল না,’ মন্তব্য গীতানাথের। আর এক প্রবীণ আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ অবশ্য মনে করেন, শতভাগ সঠিক কাজ করেছে কমিশন। এবং এতে আদৌ প্রার্থীর প্রচারের অধিকার খর্ব হয় না। সম্পাদনা : ইকবাল খান