এম. আমান উল্লাহ : কক্সবাজারের সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির দুই ভাই ও এক ফুফাত ভাইয়ের ইয়াবা ব্যবসা পরিচালনা করতেন শীর্ষস্থানীয় ইয়াবা ডন সাইফুল করিম। বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার আগে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিতে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় ইয়াবা ডন সাইফুল তারাসহ আরো ৩৩ ইয়াবা ডনের নাম বলে গেছেন। তার নিহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে টেকনাফ থানায় দায়ের করা মামলায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। গত ৩১ মে টেকনাফ থানায় মামলাটি করা হয়।
সূত্রে জানা যায়, টেকনাফ স্থলবন্দরের সীমানা প্রাচীরের শেষ প্রান্তে নাফ নদের পাড়ে গত ৩০ মে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন সাইফুল করিম। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৯টি এলজি, ৪২ রাউন্ড শটগানের তাজা কার্তুজ, ৩৩ রাউন্ড কার্তুজের খোসা ও এক লাখ ইয়াবা উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ৩১ মে টেকনাফ মডেল থানার এসআই রাসেল আহমদ বাদি হয়ে ৩৩ জনের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা করেন। এর মধ্যে ১৮ আসামির পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার আগে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ৩৩ প্রভাবশালী ইয়াবা ব্যবসায়ী ও হুন্ডিচক্রের নাম প্রকাশ করেন সাইফুল করিম। এর মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির দুই ভাই মৌলভী মুজিব ও আবদুল শুক্কুর, ফুফাত ভাই রাসেল, টেকনাফ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জাফর আহমদ, তার ছেলে টেকনাফ সদর ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়া, টেকনাফের হুন্ডিসম্রাট জাফর আলম ওরফে টিটি জাফর, তার ছোট ভাই গফুর, নাজিরপাড়ার ইয়াবা ডন নুরুল হক ভুট্ট, এনামুল হক মেম্বারসহ অনেকের নাম রয়েছে।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সাইফুল করিম স্বীকার করেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনার পর থেকে তিনি আত্মগোপন করেছিলেন। পলাতক থেকেও এলাকার ইয়াবা ব্যবসার সিন্ডিকেট নিজেই নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন। অন্যদিকে মিয়ানমার থেকে আমদানি পণ্যের ভেতরে লুকিয়ে বাংলাদেশে প্রথম ইয়াবা ট্যাবলেট তিনি নিয়ে আসেন। তখন থেকেই টেকনাফসহ সারাদেশে ইয়াবার একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতেন। তার অন্যতম সহযোগী ছিল টেকনাফের হুন্ডিসম্রাট জাফর আলম ওরফে টিটি জাফর। তার মাধ্যমে হুন্ডির টাকায় বাংলাদেশে ইয়াবার চালান আনা হতো এবং সিন্ডিকেট সদস্য ও সহযোগীদের মাধ্যমে তা সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হতো। মামলার আসামিরা যৌথ মূলধন বিনিযোগ করে ইয়াবা পাচারের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি কিনে দখল নিয়ন্ত্রণ করত। তবে মামলার এজাহারে টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি, পুলিশের কোনো কর্মকর্তা কিংবা সাংবাদিকের নাম নেই।
এ বিষয়ে টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, ‘সাইফুল করিম মৃত্যুর আগে পুলিশের পৃথক জিজ্ঞাসাবাদে কয়েকটি সিন্ডিকেটের ইয়াবা ও হুন্ডিচক্রের সদস্যদের নাম বলে গেছেন। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।